দিনটা 3rd সেপ্টেম্বর, দু হাজার তেইশ। কলকাতায় সেদিন ডুরান্ড কাপের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল। কলকাতায় থাকলে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে থাকতাম। তার আগে গ্রূপ স্টেজের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল আবার বহু বছর পর মোহনবাগানকে হারিয়েছে, তো এই ম্যাচ বদলা নেওয়ার ম্যাচ। খেলাধুলোর ব্যাপারে ডিটেলে ঢুকছি না। ম্যাচটা মোহনবাগান যেতে এবং ডুরান্ড কাপ ঘরে তোলে। দিল্লী আছি বলে কি সেলিব্রেশন হবে না ? তা হয় নাকি ? ভাবলাম চিংড়ির মালাইকারি লাগবে। সুইগি, জোম্যাটোতে পেলাম। কোই পরোয়া নেহি, নিজেই বানাবো ঠিক করলাম। দিল্লী আসার আগে কখনো মাছ রান্না করিনি। দিল্লী আসার পরে অবশ্য রুই, বাসা এসব মাছ যা পাওয়া যায়, ইউটিউব দেখে টুকটাক রান্না করেছি কয়েকদিন। খুব আহামরি কিছু না হলেও, খাওয়া যায়। সেই অভিজ্ঞতাই ভরসা দিল , সেদিনের মালাইকারি রান্নারই গল্প আমি সৃজন শোনাব আমার এই পডকাস্ট সৃজনের পডাবলীর এবারের এপিসোডে।
হাজার বছর ধ’রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি;
বনলতা সেন কবিতার সেই মালয় মানে আজকের মালেশিয়াই নাকি মালাইকারির উৎস। মালাই কারির মালাই নাকি নারকেলের দুধের মালাই না, আর মালাই কারি আসলে মালয়কারি। তা উৎস যাই হোক, পৃথিবীশুদ্ধ লোক মালাইকারি বিশুদ্ধ বাঙালি খাবার বলেই জানে।
তো যা বলছিলাম, মোহনবাগান ট্রফি জিতল, সন্ধের দিকে , ভাবলাম সুইগি বা জোম্যাটোতে মালাইকারি অর্ডার করি। ও হরি, নো মালাইকারি। কিন্তু একবার কিছু একটা করব ডিসাইড করলে সেটা তো করতেই হবে। লিসিয়াসে চিংড়ি অর্ডার করলাম। তারপর ইউটিউব খুলে দেখলাম কি করে বানানো যায়। ফার্স্ট স্টেপেই ঝামেলা, নারকেল যদি কিনেও আনি, তার দুধ বার করার কোন সরঞ্জাম নেই আমার কাছে ইউটিউবে দেখলাম, ম্যাগির একটা নারকেল দুধের পাউডার পাওয়া যায়, সেটা নিয়ে এলাম। এই পডকাস্টের মহিলা অডিয়েন্স যেহেতু মাত্র কুড়ি পার্সেন্ট, তাই সাহস করে রেসিপি ও বলব এই এপিসোডে। কে বলতে পারে, আমার মতন কোন বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে থাকা কারো হয়ত কাজে লেগে গেল। আমি ইউটিউবের রেসিপি দেখে যেভাবে করেছি সেটা বলছি, কি করে মনে আছে ? মনে নেই 😀, এই এপিসোড রেকর্ড করার আগে সেই ভিডিওটা আর একবার দেখে নোট করে নিলাম যাতে বলার সময় ভুল না করি।
প্রথমে ওই নারকেলের গুঁড়ো দুধ নিয়ে তাতে গরম জল দিয়ে দুধটা বানিয়ে নিতে হবে। এবার প্যানে তেল নিয়ে সেটা গরম করে তাতে চিংড়ি অল্প ভাজতে হবে, উল্টে পাল্টে। আমি একটু বেশি ভেজেছিলাম বলে, চিংড়িটা শক্ত হয়ে গেছিল। এই তেলেই আর একটু তেল দিয়ে তাতে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি দিয়ে একটু ভেজে তাতে পেঁয়াজের পেস্ট, আদা রসুন পেস্ট ,টমেটো পেস্ট, হলুদ আর একটু গরম মশলা দিয়ে কয়েক মিনিট ধরে নেড়ে নিলাম যতখন পর্যন্ত্য না তেল ছাড়ছে। তারপর ওই নারকেলের দুধ যেটা বানানো হয়েছে সেটা দিতে হবে। ইউটিউবে পোস্ট বাটা দেওয়ার কথা বলা আছে, সেটা আমার কাছে ছিল না বলে ওটা বাদ। এবার যে ঝোলটা তৈরী হল, সেটাতে একটু চিনি, একটু নুন, আর একটা কি দুটো কাঁচা লঙ্কা দিতে হবে। মিনিট দুয়েক,, ঝোলটা হয়ে গেলে, সেটাতে চিংড়ি গুলো দিয়ে লো হিটে মিনিট দশেক রান্না করলেই হয়ে যাবে। শুধু গ্যাস বন্ধ করার আগে এক চামচ ঘি আর একটু গরম মশলা দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। প্যারালালি ভাত ও রান্না হয়ে যাবে। বা ভাতটা মালাইকারি রান্না শেষ করে তার পরেও করা যায়। খেতে কিন্তু বেশ ভালো হয়েছিল। তার পরেও তিনবার বানিয়েছি এখনো পর্যন্ত্য। বাড়ির মতন না হলেও, খুব একটা খারাপ খেতে হয়নি। rather বেশ ভালো হয়েছিল খেতে। পরের বার গুলোতে আমি আলু ও চার টুকরো করে কেটে, ভালো করে ভেজে মালাইকারিতে দিয়েছিলাম। ভালোই লেগেছিল।
এই এপিসোড আর টেনে বড় করব না। আজ আবার মোহনবাগান হেরে গেল মুম্বাইয়ের কাছে। মুম্বাই ধীরে ধীরে একটা খুব শক্ত গাঁট হয়ে উঠছে আমাদের কাছে। মনটা একটু খারাপ হয়ে আছে। দিল্লীতে ঠান্ডাটাও জম্পেশ পড়েছে। মাঝ রাতে রেকর্ড করাও একটা ঝামেলার কাজ।
যাই হোক, চেষ্টা করব বছর শেষ হওয়ার আগে আর একবার আপনার সাথে ছোট্ট করে আড্ডা দিয়ে যেতে। জানি না, হবে কিনা। ভালো থাকবেন। কথা হবে আবার। আজ চলি, টাটা।
---
Send in a voice message: https://podcasters.spotify.com/pod/show/srijaner-podaboli/message