দিল্লীতে আমি যে জায়গাটায় থাকি সেখানে যে খাবারটা সব থেকে বেশি পাওয়া যায় সেটা বোধ হয় মোমো, তবে এই এপিসোডে মোমো নিয়ে আড্ডা শুধু দিল্লীর রাস্তায় থেমে থাকবে না। সত্যি বলতে দিল্লীর এই মোমোর সাথে মেয়োনিজ - এই ব্যাপারটা আমার খুব একটা পছন্দ হয় না। আর খুব মিস করি কলকাতায় গরম যে স্যুপটা দেয় , যেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকেন স্টক দিয়ে বানানো হয়, সেটাকে।
যে সময় আমি ভুবনেশ্বরে চাকরি করছি, মানে ওই দু হাজার আট কি নয়ের ঘটনা, সেই সময়ে ইনফোসিটির গেটের কাছে একটা গাড়িতে অল্প বয়েসী কয়েকটা ছেলে মোমো বিক্রি করত। ওরা ওই স্যুপে আদা , রসুন , পেঁয়াজের সাথে ছোট ছোট চিকেনের টুকরো আর ডিম দিত। শুধু সেটার লোভেই বেশ কয়েকদিন ওখানে মোমো খেয়েছিলাম বলে মনে পড়ে। মোমো নিয়ে এরকম স্পেশাল কোন স্মৃতি আছে নাকি আপনার ?
চলুন আমার এই পডকাস্ট সৃজনের পডাবলীর এই এপিসোডে, আপনি আর আমি সৃজন, মোমো নিয়ে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাক।
কলকাতায় ডালহৌসীতে যখন চাকরি করি, তখন অফিসের পিছনেই ছিল চাউমিন, চিলি চিকেন, আর মোমোর একটা দোকান, ওদের মোমোটাও বেশ ভালো ছিল। দোকান যারা চালান, তারা গোর্খা। এনাদের পূর্বপুরুষ সব রাজভবনে চাকরি করতেন কোন এক সময়। ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক হেড অফিসের আশপাশের খাবারের গল্প শুরু করলে, একটা এপিসোড নয়, একটা সিজন হয়ে যাবে। সে রাস্তায় যাচ্ছি না। বরং আমরা যাই তিব্বত থেকে লাসা হয়ে কাটমান্ডুর রাস্তায়। যে রাস্তা ধরে তিব্বতি মোমো ভারতে এলো। নাইনটিন সিক্সটিজে, যখন চীন তিব্বত দখল করছে, তিব্বতিরা বিপুল সংখ্যায় আশ্রয় নিলেন - দার্জিলিং, সিকিম, ধর্মশালা, লাদাখ , দিল্লী এই সব জায়গায়। আর এনাদের সাথে আসা মোমো জায়গা করে নিলো ভারতবাসীর মনে, বলা ভালো, ভারতবাসীর পেটে।
এই মোমোর আবার একটা বড়লোক কাজিন আছে, যার নাম ডিমসাম। তবে আকারে একই রকম হলেও দুজনের অরিজিন কিন্তু আলাদা আলাদা জায়গায়। মোমো তিব্বতে আর ডিমসাম চিনে। আমরা যেমন চায়ের সাথে বিস্কিট ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না , চাইনিজরা নাকি চায়ের সাথে ডিমসাম খান। যারা এটা নিয়ে একটু আধটু জানেন তারা বলেন, সব মোমোই ডিমসাম , কিন্তু সব ডিমসাম মোমো না। ডিমসাম জিনিসটা একটু বড় হোটেলে বা দামী রেষ্ট্যুরেন্টে পাওয়া যায়। বানানোর প্রসেস একটু সফিস্টিকেটেড, বাইরের কভারটা একটু পাতলা, একটু বেশি যত্ন নিয়ে বানানো , পুরের ক্ষেত্রেও অনেক রকম ভ্যারিয়েশন দেখা যায়। আমার দু একটা অফিশিয়াল কনফারেন্সে গিয়ে চেখে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল , যদিও তখন অবাক হয়েছিলাম মোমোর এরকম অদ্ভুত নাম লেখা দেখে। তবে ফাইভ স্টারে এরকম একটু অন্য রকম নাম থাকা বেশ নরম্যাল ব্যাপার, তাই ওটা যে মোমো না সেটা তখন বুঝিনি।
ফিরে আসি মোমোতে। কলকাতায় গত বছর গন্ধরাজ মোমো বেশ ভাইরাল হয়েছিল, কলকাতার বাইরে চাকরি করার জন্য এখনো সেটা চেখে দেখার সৌভাগ্য হয়ে ওঠে নি। তবে দিল্লীতে খেলাম তন্দুরী মোমো, সেই একই দোকানে পাওয়া যাচ্ছে বাটার মালাই মোমো এবং আরো অনেক ভ্যারিয়েশন। কাঠকয়লায় ভালো করে পুড়িয়ে একটু বাটার ব্রাশ করে দেয় তন্দুরি মোমোতে । আর সাথে থাকে , পুদিনা চাটনি , কাঁচা পেঁয়াজ কুচি, ঝাল সস। আমার কিন্তু বেশ ভালোই লাগল। ট্রেডিশানাল স্টিমড মোমো আর ফ্রায়েড মোমোর পাশাপাশি এইসব লোকাল ইনোভেশন ও কিন্তু বেশ পপুলারিটি পাচ্ছে। তাই যে জিনিসটা, তিব্বতী ব্যবসায়ীরা, বেশ লম্বা সময় সাথে নিয়ে ঘুরতে পারবেন বলে তাদের বাড়ির লোক ঘরোয়া খাবার হিসাবে বানাতো, সেটাই আজ নানান জায়গায় নানান ফ্লেভার পাচ্ছে।
এই এপিসোড শুনে মন টা কি একটু নেচে উঠল ? মোমো খেতে ইচ্ছে করছে কি ? তাহলে অপেক্ষা কেন ? হাতে সময় না থাকলে অনলাইনে অর্ডার করে ফেলুন আর সময় থাকলে দোকানে গিয়ে খেয়ে আসুন। আমাকে জানাবেন কেমন লাগল আজকের মোমো। আর জানাবেন কেমন লাগল আজকের এই এপিসোড।
আর যদি সৃজনের পডাবলী ফলো না করা থাকে, তাহলে সেটা করতে ভুলবেন না, ফলো করা থাকলে নতুন এপিসোড এলে মিস হয়ে যাবে না।
এই এপিসোড ভালো লাগলে এই পডকাস্ট আপনার বন্ধুবান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। ফিরব নতুন এপিসোড নিয়ে, সামনের সপ্তায়। ভালো থাকবেন , আজ চলি। টাটা।
---
Send in a voice message: https://podcasters.spotify.com/pod/show/srijaner-podaboli/message